আর রক্ষা নাই, হাসিনাকে ফেরত আনা হবে

November 1, 2024 | জাতীয়, রাজনীতি

ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাইব্যুনালের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেই বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত চাওয়া হবে। বন্দি বিনিময় চুক্তিতে কাউকে ফেরত আনতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দণ্ডিত হতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এ সময় উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস সচিব আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শুধু ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। তিনি দণ্ডিত নন। বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে তাকে ফেরত আনতে হলে তিনি দণ্ডিত হতে হবে। ওয়ারেন্ট জারি হলে আসামিকে হাজির করা তো সরকারের দায়িত্ব-সে ক্ষেত্রে সরকার তাকে ফেরত চাইবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে থাকলে তাকে হাজির করা সরকারের দায়িত্ব। দেশের বাইরে থাকলে তাকে বিচারিক ভাবে দণ্ডিত না হলে ফেরত চাওয়া যায় না।

প্রেস সচিব আরও বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সরকারি গাড়ির বিষয়ে অনুসন্ধান। সরকার প্রয়োজনে গাড়ি ক্রয় করে। প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের দৈনন্দিন কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহৃত হয়। সরকার এ পর্যন্ত কত গাড়ি ক্রয় করেছে। কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কত গাড়ি কেনা হয়েছে। গাড়িগুলোর বর্তমান অবস্থা কি? গাড়িগুলোর বয়স কত? এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করছে সরকার। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে গাড়ির হিসাব দিতে বলা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার গাড়ির হিসাব পেতে চায়।

প্রেস সচিব আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য একটি সচিবালয় স্থাপন করা হবে। ওই কলেজেগুলোর প্রশাসনিক কাজগুলো সেখান থেকে পরিচালিত হবে।

এই সচিবালয়ের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রার থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সমন্বয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ছাত্ররা মানবে কিনা এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, সরকার প্রত্যাশা করছে এ উদ্যোগ গ্রহণের পর ছাত্ররা আর কোনো আন্দোলন করবে না। তারপরও যদি কারও কোনো কথা থাকে তা সরকার শুনবে। আলোচনার মাধ্যমে যে সমস্যার সমাধান সম্ভব তা বড় করে দেখার কি আছে। আলোচনার মাধ্যমে একটি সঠিক সমাধান সম্ভব।

প্রেস সচিব আরও বলেন, মেয়ে ফুটবলারদের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। চাকমা দুজন মেয়ে যারা ভালো খেলেছে তাদের অভিনন্দন জানালে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা হাততালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। মেয়ে ফুটবল টিমের সদস্যরা ২ মাস বেতন পাচ্ছেন না। এ সমস্যা সালাউদ্দিন সৃষ্টি করে গেছেন।

আমরা বিষয়টি দ্রুত নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া মেয়ে খেলোয়াড় এবং ছেলে খেলোয়াড়দের বেতনবৈষম্য রয়েছে। বেতনবৈষম্য নিরসনে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। আশা করি সমস্যার সমাধান করা যাবে।

প্রেস সচিব আরও জানান, ভিসা প্রসেসিংয়ের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করায় ১৮ হাজার শ্রমিককে নেয়নি মালয়েশিয়া। তাদের মালয়েশিয়া পাঠাতে সরকার কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তাদের ভেরিফিকেশনের কাজ শুরু হয়েছে। সরকার আশা করছে শিগগিরই তারা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন।

নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি যোগ্য নাগরিক এবং সমাজে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদের খুঁজে বের করে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে যারা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ ছিলেন-এমন লোকদের খুঁজে বের করবে কমিটি। যাদের নির্বাচন ও প্রশাসন পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের জন্য সুপারিশ করবেন। তারপর নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তারা দেশে নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এ প্রক্রিয়াটাই তো সরকারের নির্বাচনি অভিযাত্রা। যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

ঢাকার যানজট নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ঢাকা মহানগীর যানজট নিরসনে সরকার কাজ করছে, শিগগিরই পুলিশের পাশাপাশি ছাত্ররা যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করবে। যানজট জনজীবনের একটি সংকট। বিষয়টি সরকার সচেতনভাবে নজরে রেখেছে। এ সময় প্রেস সচিব আরও বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর মানুষ মনের কথা বলতে পারেননি। কোনো দাবি-দাওয়ার কথা বলতে পারেননি।

এখন মানুষ মনে করে বর্তমান সরকার তাদের সরকার। সে কারণে মানুষ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামছেন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রাফিক জ্যাম। বিষয়টি সরকার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রেস সচিব আরও বলেন, অনেক গার্মেন্টস মালিক পালিয়েছেন। শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না। ফলে তারা রাস্তায় নামছেন। এসব আমাদের সমাজ বাস্তবতা। সরকার তা অস্বীকার করছে না। এসবের মধ্যে সরকার কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র দেখছে কিনা এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব জানান, না। সরকার কোনো ষড়যন্ত্র দেখছে না।

প্রেস সচিব আরও বলেন, বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার যে এলাকা থেকে তিনি নির্বাচিত সেই এলাকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করছেন। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তার মধ্যে বেশিরভাগ তার এলাকায়।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব পবির্তন হয়েছে, সে বিষয়টি তিনি তার দেশে বসেই বুঝতে পেরেছেন। কারণ সেখানে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিবাসন সেন্টার ভারতের নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন।

এছাড়া নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আরও কথা বলতে চায় অস্ট্রেলিয়া। সরকারের তরফ থেকে নিয়মিত অভিবাস নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উভয় সরকার অভিবাসন নিয়ে কাজ করবে এবং বিপুলসংখ্যক অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

সূত্র : যুগান্তর পত্রিকা

সর্বশেষ খবর